Social Icons

Share |

Sunday 1 September 2013

শাঁখা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে মহামূল্যবান কেন?

শাঁখা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে মহামূল্যবানশাঁখা ছাড়া সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিয়ে অসম্ভবশাঁখা হচ্ছে শঙ্খ দিয়ে তৈরি এক ধরনের সাদা অলঙ্কার

পুরাণে আছে, শঙ্খাসুরের স্ত্রী তুলসী দেবী ছিলেন ভগবান নারায়ণে বিশ্বাসী এক সতীসাধ্বী নারীআর শঙ্খাসুর ছিল ভগবানবিমুখ অত্যাচারীতার (শঙ্খাসুর) পাপের শাস্তিস্বরূপ তাকে বধ করার পর ভারত মহাসাগরে ভাসিয়ে দেওয়া হয়স্বামীব্রতী তুলসী দেবী তা সইতে না পেরে স্বামী এবং নিজের অমরত্বের জন্য ভগবানের কাছে প্রার্থনা করেনভগবান প্রার্থনা মঞ্জুর করে তার দেহ থেকে তুলসী গাছ এবং সমুদ্রে হত্যা করা স্বামীর রক্ত বা অস্থি থেকে শঙ্খ বা শাঁখার উৎপত্তি করেনতুলসী দেবীর ধর্মপরায়ণতায় সন্তুষ্ট হয়ে ভগবান দু'জনকেই ধর্মীয় কাজে নির্ধারণ করে দেনসেই থেকে পতিব্রতা তুলসীকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের তুলসী ও শাঁখা ব্যবহারের প্রচলন হয়ইতিহাসে খ্রিস্টপূর্ব পাঁচ হাজার বছর আগে (মহাভারতের যুগে) শাঁখা ব্যবহারের কথা উল্লেখ আছে

তা ছাড়া সনাতনদের পূজা-অর্চনা, সামাজিক, মাঙ্গলিকসহ যে কোনো শুভ অনুষ্ঠান শঙ্খের ধ্বনি ছাড়া হয় না বললেই চলে
শঙ্খধ্বনি ছাড়া যে কোনো পূজাই অসমাপ্তশঙ্খধ্বনি আমাদের কাছে পবিত্রশঙ্খ দর্শনে পাপ ক্ষয় হয়সে জন্য পূজায় সন্ধ্যার সময় বিয়েতে অথবা যে কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানে শুভ পরিণতির জন্য শঙ্খ বাজানো হয়ে থাকেশঙ্খ অশুভ শক্তি বিনাশের প্রতীককখনও পূজা-পার্বণের ধ্বনিতে কখনও শ্রীকৃষ্ণের রণবাদ্য আবার কখনও নারায়ণের হাতের পরশে কখনও বা সাবিত্রীর সতীত্ব বলয়ে

শঙ্খ হিন্দু রমণীর সতীত্বের প্রতীকবিবাহিত হিন্দু রমণীর সঙ্গে জড়িত রয়েছে একজোড়া শাঁখাকারণ কুমারী অবস্থায় শাঁখা পরা যায় নাতাই সে গুনতে থাকে প্রহর কখন তার হাতে উঠবে বিয়ের প্রতীক হিসেবে একজোড়া শঙ্খবালাতাদের ধারণা, এ শঙ্খবালা যতদিন হাতে থাকবে ততদিন তার স্বামী সুস্থ দেহে বেঁচে থাকবেতাদের বিশ্বাস, হাত শাঁখাহীন থাকলে স্বামীর অমঙ্গল হয়
তবে শঙ্খ শুধু বিবাহিত ও হিন্দু রমণীর হাতের শোভা হিসেবে ব্যবহৃত হয় না, আরও অনেক কাজে ব্যবহৃত হয় ধর্ম ও বিশ্বাসের আধার হিসেবেদেবতার পূজায় শঙ্খে কপিলা গাভীর দুধ ভরে নারায়ণকে স্নান করানো হয়বলা হয়, শঙ্খধ্বনি যতদূর পর্যন্ত যায় ততদূর পর্যন্ত লক্ষ্মী দেবী অবস্থান করেনশঙ্খ কূটরস পুষ্টিবর্ধক, বলকারকশূলকফ-শ্বাস-বিষ দোষনাশক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়মুখের যে কোনো দাগ মোচন করে শঙ্খ চুন

সাধারণত শঙ্খ পাওয়া যায় ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরেআরব সাগরেও কিছু প্রাপ্তি ঘটেপ্রাপ্তির ওপর ভিত্তি করে শঙ্খের বিভিন্ন নামকরণ করা হয়বিভিন্ন জাতের শঙ্খ রয়েছেএদের মধ্যে উন্নতমানের হচ্ছে কন্যা কুমারী, রামেশ্বরী, কেপি, জাজি, পাটি, মতি সালামত, ওমেনি, দোয়ালি, সারভি কি, তিতকুটি, ধলা ইত্যাদি'মতি সালামত' সর্বশ্রেষ্ঠকারণ এর মধ্যে মুক্তা পাওয়া যায়শঙ্খের মুখ, লেজ ও পিঠ আছেসাধারণত বাম দিকে শঙ্খের মুখ থাকেযদি শঙ্খের মুখ ডান দিকে থাকে তবে তার মূল্য অনেকএটাকে নারায়ণের হাতের শঙ্খের অনুরূপ মনে করা হয়এ দক্ষিণমুখী শঙ্খকে সৌভাগ্যের লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়এ শঙ্খ দিয়ে পূজা করলে ঘরে সৌভাগ্য আসে, বিপদ-আপদ দূর হয়শঙ্খ একটি প্রাচীন শিল্পহরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো সভ্যতা আবিষ্কারের সময় শঙ্খশিল্পের বিভিন্ন কারুকাজের নিদর্শন পাওয়া যায়

দুর্গাপূজার অন্যতম অনুষঙ্গ শঙ্খপুরোহিতের মন্ত্র, ঢাকের আওয়াজ, শঙ্খধ্বনি_ এই শব্দগুলো সনাতন পূজা মণ্ডপের পরিচিত অনুষঙ্গএগুলো ছাড়া পূজাই হয় না

0 comments:

Post a Comment

 

Sample text

Sample Text

Sample Text